Go Back to All Articles আমার যত ইন্টারভিউ

আমার প্রথম ইন্টারভিউ ছিল সেদিন যখন আমার লাস্ট সেমিস্টারের লাস্ট এক্সাম হবে। আমার বন্ধু সেখানে জয়েন করেছে কয়েক মাস আগে। ডটনেট ফ্রেমওয়ার্কে জব। এখন পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ এর সময় এক। কি করা যায়। দেখলাম পরীক্ষা তো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর উপর, ২ ঘণ্টার পরীক্ষা আধা ঘণ্টায় যদি শেষ করতে পারি, তাহলে ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারবো। আমি আসলে বললেই পারতাম যে আমার পরীক্ষা আছে। কিন্তু ঐ যে শিক্ষার্থী বলে ভয় পেয়েছি। এখন বুঝি, তখন তো আর বুঝতাম না।

তো যে প্ল্যান সেই কাজ। ঠিক আধা ঘণ্টায় পরীক্ষা শেষ করে বের হয়ে গেলাম। ইন্টারভিউ সময়ের ১৫ মিনিট আগে অফিস খুজে বের করে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকলাম। অফিস একটু ভিতরে ছিল, প্রথমে খুজে পাচ্ছিলাম না। ভয় পাচ্ছিলাম যে দেরি না হয়ে যায়। কিন্তু যখন খুজে পেয়ে গেলাম তখন কি করবো সেটা নিয়ে চিন্তিত। কারণ কোথায় যেন শুনেছি, এপয়েনম্যাণ্টের ১০ মিনিট আগে ভিতরে যাওয়া উচিৎ। বিদেশী এক্সপার্টদের থিওরি আরকি। বেশি আগে গেলে ভাববে আমার সময়ের দাম নেই। আর পরে গেলে ভাববে সময় জ্ঞান নেই। তো রাস্তায় দাড়িয়ে পায়চারী করলাম কিছুক্ষণ।

এরপর ভিতরে গেলাম। ওয়েটিং রুমে সোফায় বসলাম। আমার সাথে আরও একজন বসে ছিল। ভিতরে আরেকজন পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি বসে বসে এদিক ওদিক দেখতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর ভিতরের পরীক্ষার্থী মুখ কালো করে বের হয়ে গেল। ভিতরে কিছু উত্তেজিত কথা শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছে তার ইন্টারভিউ ভালো হয়নি। এরপর আমাকে ডাকা হল। ভিতরে গেলাম। একটু নার্ভাস কিন্তু কনফিডেন্ট।

আমাকে একটি কাগজ ও কলম দিয়ে বললো, কিছু নম্বর সর্ট করার কোড লিখতে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম বাবল সর্ট করলে হবে নাকি। বলল হবে। সহজে বাবল সর্ট এর কোড লিখে দিলাম। এরপর ডাটাবেস নিয়ে প্রশ্ন করলো। বিভিন্ন রকম জয়েন ও নরমালাইজেশন ফর্ম ও বিভিন্ন রকম কী (Key) নিয়ে। জানা উত্তর। ঝটপট উত্তর দিয়ে দিলাম।

এরপর জিজ্ঞাসা করলো, যে এখন জয়েন করতে পারবো কিনা। বললাম পারবো। এরপর আমাকে বুঝালো যে তারা শুরুতে সেলারি অনেক কম দেয়। কারণ দেখে যে কে আসলে ভালো। এরপর দ্রুত সেলারি বাড়ানো হয়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কত। বলল ৮০০০। শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। আমি ১৮,০০০ টার্গেট নিয়ে এসেছিলাম। আমি বললাম ১২,০০০ হলে ভালো হয়। তিনি আমাকে বুঝাতে লাগলেন যে শুরুতে সেলারি কত সেটা বড় কথা নয়। দ্রুত সেলারি বাড়বে। কিছুটা চাপের মধ্যে পরে গেলাম। মানাও করতে পারছি না, আবার রাজিও হতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু তিনি না শুনতে রাজি নন। আমাকে বললেন আগামী কাল এসে এপয়েন্টম্যান্ট লেটার নিয়ে যেতে। আমি রাজি হয়ে চলে আসলাম।

বাসায় এসে এক বড় ভাইকে ফোন দিলাম সাজেশনের জন্য। তিনি আমাকে তার কোম্পানিতে জয়েন করতে বলেছিলেন কিছুদিন আগে। কিন্তু ইন্টারভিউ কল আসে না দেখে অন্য জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। মূল ইচ্ছা ছিল সেই বড় ভাই এর সাথে কাজ করার। ফোনে তিনি আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন। আরও বললেন এটা খুব কম সেলারি আমার জন্য।

পরদিন চিন্তায় পরলাম। মানা কিভাবে করি। বলেছে এপয়েন্টম্যানট লেটার নিতে আর আমি কিনা বলবো যে জয়েন করবো না। কারণ কি বলি? বন্ধুকে ফোন দিলাম, সে কিছু বুদ্ধি দিল। সেই মত ফোন করে দুঃসংবাদ জানিয়ে দিলাম। তারা হতাশ হল, ফোনেই বুঝতে পারলাম। আসলে সেলারির থেকে ঐ বড় ভাই এর সাথে কাজ করার আগ্রহই মানা করার মূল কারণ ছিল।

কিন্তু এখন জব ছেড়ে দিয়ে বসে আছি বেশ কিছুদিন। ইন্টারভিউ এর কল আসে না। বড় ভাইকেও নক করি না। তিনি কি ভাবেন এই ভেবে। পরে আর না পেরে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন কোম্পানিতে কিছু সমস্যা হয়েছে, তাই লোক নিতে একটু দেরি হবে। এখন তো পরে গেলাম মহা মুসিবতে। কোথাও থেকে কেউ কল করে না। ৩ মাস বেকার বসে আছি।

এই দেখে আমার নানু আমাকে একটি আত্মীয়র হাসপাতালে রিসিপশনিস্ট এর চাকরি দিতে নিয়ে গেলেন। আমি তো মহা বিরক্ত। কিন্তু তিনি তো আর জানেন না যে আমার কি কাজ। তার মতে সেখানেও আমাকে কাজ করতে কম্পিউটার দেয়া হবে। যেহেতু জব পাচ্ছি না তাই বেশি কিছু বলতে পারলাম না। গেলাম তার সাথে। হাসপাতালের ডিরেক্টর আমার পরিচিতি শুনে বুঝলেন যে ভুল করা হচ্ছে। তিনি মানা করলেন আমাকে সেখানে জয়েন করতে। আমি এখন সাপোর্ট পেলাম। তিনি নানুকে বুঝালেন যে এই ছেলে এখানে কেন চাকরি করবে। তার এক বন্ধুর বড় একটি কোম্পানি আছে, সেখানে তিনি আমার সিভি রেফার করে দিবেন বললেন। আমরা চলে আসলাম। কিন্তু তাও কোন কল আসে না।

চিন্তায় পরে গেলাম। ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা যারা চাকরি পেয়েছে তাদের কল করে জিজ্ঞাসা করলাম এসব কি হচ্ছে। কেউ আমাকে ডাকে না কেন। তারা আমার কথা শুনে অবাক। বলে যে আমি নাকি দেশের বাইরে যাচ্ছি উচ্চ শিক্ষার জন্য। এটাই নাকি সব স্যাররা বলছে। তাই কেউ আমাকে নক করে না। আসলে আমার ২ টিম ম্যাট যাদের সাথে আমি সব সময় চলি ফিরি, তারা ২ জনই বাইরে যাচ্ছে। তাই সবাই ধরে নিয়েছে, তারা গেলে আমি আর না যাই কিভাবে। কিন্তু আমার যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই সেটা বললাম।

এরপর ২য় ইন্টারভিউ এর কল আসলো। কিন্তু জব পিএইচপিতে। মন খারাপ হল। তবে জানতে পারলাম তারা যে ফ্রেমওয়ার্ক ব্যাবহার করে সেটা ডটনেট এর মতই। আর আমি পিএইচপি ও জানি। তাই কয়েক দিনে সেই ফ্রেমওয়ার্ক শিখে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম।

কোম্পানি ছোট। তবে আমার পরিচিত বন্ধু ও সিনিয়র ভাইদের অনেকেই সেখানে আছে। খুব ফ্রি অফিস। সবাই খুব মজা করে। আমি বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে অন্য একটি রুমে নেয়া হল। সেখানে ৩ জন আসলো। একজন সিনিয়র ভাই যিনি সেখানে টিম লিড, একজন কোম্পানির বস, আর বাইরে থেকে তার একজন বন্ধু।

তারা আমাকে একটি বাইনারি ট্রি ট্রাভারস এর কোড লিখতে দিলেন কাগজে। করলাম। এরপর ১২ ঘণ্টার সময়কে ২৪ ঘণ্টায় পরিণত করার মত একটি কোড লিখতে দিলেন। লিখলাম। কোড দেখে তারা সন্তুষ্ট। ছোট কিছু ভুল ছিল। তেমন বড় কিছু না। এরপর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। যেমন বেতন কত নিবো। বললাম ১৮,০০০। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন আমি কখন এই কোম্পানি থেকে চলে যাবো। বললাম যখন দেখবো আমার সেলারি খুব কম অথবা যখন দেখবো আমার এখানে আর কিছু শেখার নেই। তারা আমাকে ১৫,০০০ অফার করলেন। বললেন ১৮,০০০ দিলে আমার সেলারি অন্য একজন যে আমার আগে জয়েন করেছে তার থেকে বেশি হয়ে যায়। আমি ভেবে দেখবো বলে চলে আসলাম।

এরপর বাসায় এসে চিন্তায় পরে গেলাম। ১৫,০০০ জয়েন করতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কি করি। কয়েকদিন বসে থাকলাম। বন্ধু ফোনে বলল জয়েন করে ফেলতে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে জয়েন করবো এবং জানিয়ে দিলাম।

জয়েন করার ১ সপ্তাহ পর ফোন আসল একটি কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ এর জন্য। ঐ যে হাসপাতালের ডিরেক্টর তিনি সিভি রেফার করেছিলেন যেখানে। আমি বললাম আমি তো এক জায়গায় জয়েন করে ফেলেছি। ও আচ্ছা বলে তারা ফোন রেখে দিল। আমি আসলে এক জায়গায় জয়েন করে এত দ্রুত সুইচ করতে চাইনি। যত বড় কোম্পানিই হোক।

৯ মাস সেখানে জব করার পর প্রায় সব কিছু অয়ত্ত করে নিলাম। বেশ ভালো সময় কাটছিল। কিন্তু ছোট টিম। আমার লক্ষ্য আরও অনেক বড়। তাই কিভাবে আরও সামনে যাওয়া যায় ভাবছিলাম। তখন সেই বড় ভাই ফোন করলেন যে এখন কোম্পানি লোক নিবে আমি যেন ইন্টারভিউ দিতে যাই।

ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে দেখি একজন বিদেশী লোক। শুনলাম তিনি নাকি এই কোম্পানির মালিক, দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। আমার বড় ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি ইংরেজিতে কথা বলেন। আমিও ইংরেজিতেই উত্তর দিলাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন ৫ বছর পর আমার লক্ষ্য কি হবে। আমি বললাম আমি সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট হতে চাই।

এরপর আমাকে লিখিত পরীক্ষার সময় দেয়া হল। আমি লিখিত পরীক্ষা দিলাম। বুঝলাম পাস করবো। প্রায় সব প্রশ্ন উত্তর দিতে পেরেছি। এরপর ডাক এল। আমাকে এপয়েন্টম্যান্ট লেটার ধরিয়ে দেয়া হল। জানিও না সেলারি কত। খুলে দেখলাম ২৫,০০০। তখন আগের কোম্পানিতে আমার সেলারি ছিল ১৮,০০০ অথবা ১৯,০০০। যাই হোক জয়েন করলাম সেখানে। ৩ মাসের মধ্যে সেলারি বেড়ে ৩৫,০০০ হল এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে আমাকে ডেপুটি টিম লিড করা হল, মানে ডাবল প্রমোশন।

২ বছর সেখানে জব করলাম। তখন ২০০৮ সনের অর্থনৈতিক মন্দা চলছিলো। যদিও সেটা সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা তখন ছিল না। তবে অফিসে সবাই বলাবলি করতো যে কখন জানি কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার আমি বিয়ে করেছি। বসকে ইমেইল করলাম সেলারি বাড়ানোর জন্য। বললাম না হলে আমি থাকবো না। সেটা তখন ভয়ংকর সাহসের কাজ ছিল। তবে আমি জানিয়ে দিলাম। কোন উত্তর আসলো না। অপেক্ষা করে বিরক্ত হয়ে ভাবলাম, বস আমার বিষয়ে কোন কেয়ার করে না।

জব পোস্ট দেখে একটি কোম্পানিতে অনলাইনে এপ্লাই করলাম। কিছুদিন পর ইন্টারভিউ কল আসলো। সেখানে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। অফিস বন্ধ ছিল আর বস তখনও আসেননি অফিসে। তিনি এসে সরি বললেন এবং আমাকে একটি পিসিতে বসিয়ে দিলেন। একটি ছোট প্রোজেক্ট বানাতে বললেন এবং কিছু রিটেন টেস্ট নিলেন। পরীক্ষার সময় ছিল ২ ঘণ্টা। আমি ১ ঘণ্টায় সব লিখে দিয়ে চলে আসলাম। বলা হল, এরপর আরেকটি ধাপ আছে যেখানে বিদেশের টিমের সাথে আমাকে ফোনে ইন্টারভিউ দিতে হবে।

কিন্তু এরপর আমাকে একদিন ফোনে জানানো হল তাদের অফিসে যেতে। গিয়ে শুনলাম আমাকে এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিতে ডেকেছে, ২য় ইন্টারভিউ নাকি হবে না। আমার কোড দেখে নাকি বিদেশী টিম এত খুশি যে তারা আর ইন্টারভিউ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। সেলারি বলা হল ৪০,০০০। কিন্তু আমি বললাম যে ৪৫,০০০ চাই। বলল ৬ মাস পর বাড়ানো হবে। আমি লেটার নিয়ে কনফার্ম করে চলে আসলাম। বর্তমান কোম্পানিকে জানালাম। সবাই খুব হতাশ, বলল আবার বিবেচনা করতে। কিন্তু আমি বিরক্ত। আমার ইমেইল এর উত্তর দেয়া হয়নি। এখন উত্তর আসলো। বস বললেন যে তিনি আমার বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু আমি বললাম যে আমি একবার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, তাই আমার পক্ষে এখন আর সেটা পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এর কিছুদিন পর সেই সিনিয়র ভাই আমাকে আবার ফোনে জানালেন যে তিনিও সম্ভবত অন্য একটি কোম্পানিতে সুইচ করবেন। আমি তার সাথে যাবো কিনা। আমি রাজি হলাম। সেলারিও ভালো জানলাম। একবারে ৬০,০০০ টাকা। রাজি হয়ে গেলাম। নতুন কোম্পানি। আগের ডেভেলপার টিম ছোট। এরপরও জয়েন করলাম। কিন্তু সেখানে সেলারি ভালো হলেও মন টিকছিল না। কোম্পানিও বন্ধ হবে কি হবে না এরকম চলছিলো। বড় ভাইও আর সেখানে জয়েন করেননি।

কিছুদিন পর পারিবারিকভাবে একটি সুযোগ আসলো ব্যবসা শুরু করার। কিছু মূলধন জমালাম। আর ভাগ্যক্রমে অনলাইনে কিছু ক্লায়েন্ট পেয়ে গেলাম। শুরু করে দিলাম ব্যবসা।

এরপর ব্যবসা চলাকালীন কিছু রিমোট জব করেছি। তখন ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে।

প্রথম জবে সেলারি ২ লাখ টাকা ছিল। প্রথমে অনলাইনে অবজেক্টিভ প্রশ্ন উত্তর দিতে হল। অনেক কঠিন পরীক্ষা ছিল। এরপর একটি ছোট প্রোজেক্ট করে পাঠাতে হল। সেটাতেও পাস করলাম। আসলে আমি জানতাম পাস করবো। এরপর ভাইভাতে প্রোজেক্ট নিয়ে প্রশ্ন করলো, একটি কোড লিখতে দিল। সহজ কোড। কিছু নম্বর থেকে ২য় বৃহত্তম ও ২য় ক্ষুদ্রতম নম্বর বের করতে হবে। খুব সহজে করে দিলাম। ইন্টারভিউ যিনি নিচ্ছিলেন তিনি আমার অনেক প্রশংসা করলেন। বললেন আমার প্রোজেক্ট অনেক গুছানো, তিনি একবারেই সব বুঝে গেছেন। আর অন্য যারা জমা দিয়েছে, কোন আগা মাথা নেই কোডের। বুঝলাম পাস করে যাবো। এরপর HR ইন্টারভিউ হল। সেখানে নাম ঠিকানা, নিয়ম কানুন নিয়ে কথা হল। কিন্তু এরপরও জব হবে না। আবার একটি ভাইভা হবে। একদিন নক আসলো। যিনি ভাইভা নিলেন, তিনি আমার দেখা একজন অসাধারণ প্রোজেক্ট ম্যানেজার। মজার ব্যাপার তিনি আমাকে কোন প্রশ্ন করলেন না। জানালেন যে আমাকে কি কি কাজ করতে হবে এবং বললেন যে কাজ থেকেই তিনি বুঝবেন যে আমি কেমন। এত সহজে পেয়ে গেলাম কাজ যে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ এটা সব থেকে কঠিন পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

এরপর আবার পরীক্ষা দিলাম রিমোট জবের জন্য আর্কিটেক্ট পদে। সেখানে একই ভাবে আগাতে হয়েছে। তবে প্রশ্ন এবার অনেক কঠিন ছিল। অনেক কঠিন কঠিন অবজেক্টিভ। প্রোজেক্ট ছিল Directory Service এর মাধ্যমে লগইন রেজিস্ট্রেশান সিস্টেম সহ একটি ছোট প্রোজেক্ট করতে হবে।

ইন্টারভিউতে থ্রেড নিয়ে কোড লিখতে দিল। সহজেই করে দিলাম। এরপর এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার, কোডিং গুড প্র্যাকটিস, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ডিজাইন ও ইউনিট টেস্টিং নিয়ে ১ ঘণ্টা ধরে অনেক প্রশ্ন করলো। অনেকভাবে আমাকে আটকাতে চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না। পেয়ে গেলাম জব। বেতন হয়ে গেল ৪ লাখ।

এরপর আমি চীফ আর্কিটেক্ট হিসাবে খুব সহজেই জব করতে পারতাম। ৭ লাখ হত সেলারি। কিন্তু আমি অনেক বছর সেখানে কাজ করার পরও সেই রোলে এপ্লাই করিনি। আমার আন্ডারে যারা জয়েন করে শিখেছে, যাদের আমি হাতে ধরে শিখিয়েছিলাম, তারা এখন সেখানে প্রোজেক্ট ম্যানেজার বা চীফ আর্কিটেক্ট। তাদের বেতন ৭ লাখ। আমি মূলত বিজনেস সামাল দিতে সমস্যা হবে, সময় মেনেজ করতে পারবো না, এই কারণে এত বড় দায়িত্ব নিতে চাইনি। একবার পরীক্ষা দিয়ে শেষ স্টেপ (ভাইভা) পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। প্রশ্ন ছিল মূলত কিভাবে টিমকে আরও প্রোডাক্টীভ করা যায় ও খরচ কমানো যায় সেটা নিয়ে নতুন কোন প্রসেস সাজেস্ট করা। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি অনেক প্রেসার আর সময় দিতে কষ্ট হয় বলে।

অনেকেই আমাকে দেশের বাইরে যেতে বলে, বলে যে কানাডাতে গেলে ১০ লাখ এর মত সেলারি পাবো। তবে আমার এখন আসলে শেখাতে ভালো লাগে। তাই ডেভস্কীল নিয়েই আছি। যদিও এখানে মাসে ২ লাখও আয় করা কষ্ট হয়ে যায়। যাই হোক…

এরপর আর কোন জব করিনি। তবে মাঝে মধ্যে রিমোট জবে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। মূলত আর্কিটেকচার, ডকার ও ক্লাউড নিয়ে প্রশ্ন আসতো। আর এগুলো জানা থাকায় আমি খুব সহজে পার পেয়ে যেতাম।

মোঃ জালাল উদ্দিন

প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ডেভস্কীল.কম

Share with Your Friends